টেনেট (২০২০)
আচ্ছা, ডিম আগে না মুরগি আগে কি বলা সম্ভব? বা ধরুন, কেউ কি তার অতীতে গিয়ে নিজের বাবা বা মায়ের জন্মের আগে দাদু কে মেরে আসতে পারে? এই প্রশ্নগুলোর উত্তর দেওয়া হয়তো সম্ভব নয়। কারণ, এগুলো এক একটা প্যারাডক্স। অর্থাত্ 'আপাত বিরোধী হইলেও সত্য' এক ঘটনা প্রবাহ। এবং সময়ের এই লুপ নিয়ে তৈরি বহু সিনেমা আমরা আগেও দেখেছি। সেদিক থেকে ক্রিস্টোফার নোলানের টেনেট আলাদা কিছু নয়। টেনেটেও বার বার এই কথাটাই উঠে এসেছে।
নায়ক জিজ্ঞেস করেন, "তোমার কী মনে হয়?"
"হোয়াট'স হ্যাপেনড হ্যাপেনড" উত্তর দেয় নীল, ওরফে, রবার্ট প্যাটিনসন। সবই প্রিডেস্টাইনড। কিছুই পাল্টানো যায়না।
টেনেট নিয়ে আলোচনা করতে গেলে প্রথমেই আমাদের গল্পটার বিষয়ে একটু জেনে নিতে হবে। গল্পের শুরুতে...নাহ্, গল্পের শুরু বলে কিছু নেই... সিনেমার শুরুতেই দেখানো হয় আমাদের নায়ক (জন ডেভিড ওয়াশিংটন) , একজন সিআইএ এজেন্ট, তার কিছু সঙ্গীসাথীর সাথে একটা এক্সট্র্যাক্সন মিশনে গেছেন কীইভ অপেরা হাউসে। তার দলবল লক্ষ্য অনুযায়ী একটা বিশেষ জিনিস উদ্ধার করে (আর্টিফ্যাক্ট), কিন্তু সে নিজে ধরা পড়ে যায় এবং সুইসাইড পিল খেয়ে নেয়। পরবর্তীতে সে জানতে পারে যে সে আসলে একটা নকল বড়ি খেয়েছিল। এটা একটা টেস্ট ছিল। এরপর টেনেট নামের একটা সংস্থা তাকে নিযুক্ত করে এবং তাকে অল্প করে বুঝিয়ে দেয় কী করতে হবে। এখানেই সে জানতে পারে এক বিশেষ রকমের বুলেটের ব্যপারে। এই বুলেট গুলো ইন্ভার্টেড এনট্রপি-যুক্ত বুলেট অর্থাত্ রৈখিক সময়রেখায় তারা বিপরীতে চলতে পারে। এরপর নায়কের দেখা হয় তার কেস অফিসার নীলের সাথে। এরপর এরা দুজনেই জানতে পারে একজন ইন্ডিয়ান আর্ম-ডিলারের কথা। তাই তারা মুম্বাইয়ে যায় প্রিয়ার (ডিম্পল কাপাডিয়া) সাথে দেখা করতে। এরপর ওরা জানতে পারে যে প্রিয়া টেনেটেরই একজন এজেন্ট। প্রিয়া জানায় যে সে যে কার্তুজগুলো বিক্রি করে সেগুলো একজন রুশ ধনকুবের (আন্দ্রেই সেতর) কিনে নিয়ে সেগুলোকে ইন্ভার্টেড অস্ত্রে পরিণত করে। এখন এই সেতরের কাছে পৌছনোর জন্য নায়ক ক্যাটের (সেতরের বউ যে এখন আর সেতরকে ভালোবাসে না। বরং ডিভোর্স চায় কিন্তু কিছু জটিলতার কারণে সেটা হয়ে ওঠেনি। বরং গয়ার একটা পেইন্টিং নিয়ে সেতর তাকে ব্ল্যাকমেইল করছে) সাহায্য চায়। এই সাহায্যের পরিবর্তে নীল এবং নায়ক সেতরের ফ্রী পোর্ট স্টোরেজ ফেসিলিটি থেকে ওই পেইন্টিং টা চুরি করার চেষ্টা করে। এবং এই পুরো জিনিসটা করতে গিয়ে তারা 'টার্নস্টাইল' থেকে বেরিয়ে আসা দুজন মাস্ক পরিহিত লোকের মুখোমুখি হয়। কিছুক্ষণ মারামারির পর ওই লোক দুটো পালিয়ে যায়। পরে প্রিয়া জানায় যে 'টার্নস্টাইল' আসলে যেকোনো বস্তুর (এমনকি মানুষের) এনট্রপিকে উল্টে দিতে পারে। অর্থাত্ ওই মানুষ দুটো আসলে ইন্ভার্টেড মানুষ যারা সময়ে বিপরীত দিকে ট্র্যাভেল করছে।
সিনেমাটা প্রথবার দেখতে বসে এতদূর অব্দি আসলে তেমন কিছু বোধগম্য হয়না। আমরা শুধু পর পর ঘটে চলা ঘটনা গুলো দেখতে থাকি। এবং পর পর আমাদের দিকে ছুঁড়ে দেওয়া হয় একের পর এক তথ্য এবং পদার্থবিদ্যার তত্ত্ব যা আমরা এক যায়গায় করে কোনও সংলগ্ন মানে তৈরি করতে পারিনা। অর্থাত্ নোলানের এই ছবির কথন ইচ্ছাকৃতভাবেই অস্বচ্ছ। আমরা সাধারণত জটিল প্লটবিশিষ্ট ছবির কথা এলে জার্মান ওয়েবসিরিজ ডার্ক -এর কথা বলে থাকি। কিন্তু টেনেট দেখলে বোঝা যায় ডার্ক ততটাও জটিল ছিল না। ডার্ক আপাতভাবে জটিল মনে হয় তার কারণ প্রচুর চরিত্র, প্রচুর গল্প, একাধিক সময়কাল এবং এসবের মধ্যে কোন চরিত্র কোথায় বা কখন আছে সেই নিয়ে একটা ধাঁধা তৈরি হওয়া। কিন্তু টেনেটের ক্ষেত্রে বিষয়টা শুধু জটিল বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব, একাধিক সময়কাল, ইত্যাদি নয়। সংলাপও একটা বিশেষ ভূমিকা এই জটিলতায় পালন করে।
যাইহোক, এরপর সেতর নায়ক কে মারার প্ল্যান করে, কিন্তু দেখা যায় নায়ক তাকেই জলে ডোবা থেকে বাঁচায়। এবং এখান থেকেই নায়কের সাথে সেতরের একটা পার্টনারশিপ হয় এবং নায়ক তাকে প্লুটোনিয়াম-২৪১ উদ্ধার করতে সাহায্য করে। এবং পরে বুঝতে পারে যে ওটা আসলে প্লুটোনিয়াম ছিল না। ছিল অন্য একটা আর্টিফ্যাক্ট। পরে আমরা জানতে পারব এই আর্টিফ্যাক্ট আসলে আলগরিদমের (এই বিষয়টায় আসছি) ন'টা অংশের একটা অংশ। যাইহোক, এরপর ইস্তোনিয়া তে নীল এবং নায়ক ওই আর্টিফ্যাক্টটা উদ্ধার করে, কিন্তু অন্যদিকে এক 'ইন্ভার্টেড সেতর' ক্যাটকে বন্দী করে রাখে। অতঃপর নায়ক তাকে একটা খালি বাক্স ধরিয়ে দেয়। কিন্তু আবারও তারা ধরা পড়ে যায় এবং তাদেরকে একটা ওয়্যারহাউসে নিয়ে আসা হয় ইন্ভেস্টিগেশনের জন্য। এই ইন্ভার্টেড সেতর (যাকে আমরা উল্টো সেতরও বলতে পারি) সেই আর্টিফ্যাক্ট বা বাক্সটার লোকেশন জানতে চায় এবং ক্যাটের পেটে একটা 'উল্টো গুলি' করে। তারপর উল্টো সেতর আবার টার্নস্টাইলে ঢুকে যায়। টেনেটের এজেন্টরাও ক্যাট কে নিয়ে একটা টার্নস্টাইলের ভেতর ঢুকে যায় যাতে ক্যাটের ক্ষতটা সেরে উঠতে পারে।
এরপর নায়কও সময়ে বিপরীত দিকে ট্র্যাভেল করবে বলে ঠিক করে। অতীতে গিয়ে সে আর্টিফ্যাক্টটাকে উদ্ধার করার চেষ্টা করে কিন্তু তার গাড়িটা রাস্তায় পালটি খেয়ে পড়ে যায়। এবং সেতর, তার গাড়িতে আগুন লাগিয়ে দেয়। কিন্তু মজার বিষয় হল, নায়ক এখন ইন্ভার্টেড মানুষ, তাই সাব-আ্যটমিক লেভেলে তার শরীরের বুনন পাল্টে গেছে। সোজা ভাষায় সে নিজেই ইন্ভার্টেড হয়ে গেছে। তাই তাপ তাকে স্পর্শ করেনি। কেননা ইনভার্শন ঘটলে সমস্ত কিছুই উল্টো দিশায় ঘটতে থাকে। বন্দুক থেকে গুলি ছোঁড়া হয়না, বন্দুকে গুলি ধরা হয়। গাড়িও উল্টো দিকে চলে আর মানুষ উল্টো দিকে শ্বাস নিতে পারে না তাই আলাদা অক্সিজেন মাস্ক ব্যবহার করে। ঠিক সেভাবেই আগুনের হল্কা নায়ককে টাচ করেনা। বরং সমস্ত তাপ তার শরীর থেকে দূরে সরে যায়, বা নায়কের হাইপোথার্মিয়া হয়।
যাইহোক, টেনেটের অন্য এজেন্টরা ঠান্ডায় কাহিল নায়ককে উদ্ধার করে। নায়ক আবার অতীতে ট্র্যাভেল করে সেতরের ফ্রিপোর্ট স্টোরেজ ফেসিলিটিতে। এবং নিজেই নিজের সাথে মারামারি করে এবং ফিরে আসে। এরপর প্রিয়ার সাথে দেখা করে নায়ক জানতে পারে সেতরের কাছে এখন আলগরিদমের ন'টা টুকরোই রয়েছে। যেটা দিয়ে ভবিষ্যতের কিছু মানুষ পুরো পৃথিবীর এনট্রপিই পাল্টে ফেলবে। যে বিজ্ঞানী এই ইনভার্শনের প্রযুক্তিটা আবিষ্কার করেছিল, সে বুঝতে পারে যে এই প্রযুক্তিকে ধ্বংসাত্বক কাজেও ব্যবহার করা যেতে পারে। এই আশঙ্কায় তিনি যন্ত্রটিকে (আ্যলগরিদম) ন'টি ভাগে ভাগ করে নানা জায়গায় লুকিয়ে রাখেন। (বিষয়টা অনেকটা লর্ড অফ দ্য রিংসের ন'টা আংটি, হ্যারি পটারের সাতটা হরক্ৰক্স অথবা আ্যভেঞ্জার্সের ছ'টা ইনফিনিটি স্টোনস্-এর মত ভাবা যেতে পারে।) এখানেই আমরা প্রিয়ার কথায় ওপেনহাইমার এবং ম্যানহাটন প্রজেক্টের একটা রেফারেন্স পাই। যাইহোক, এই ন'টা অংশ একসাথে বাবহার করলে পুরো পৃথিবী ধ্বংস হয়ে যেতে পারে। অন্তত নীল তাই মনে করে।
সেতর তার টাস্ক সম্পুর্ন করবে বলে তার হোমটাউন স্টাল্স্ক-১২ এ আলগরিদমটা পুঁতে ফেলার কথা ভাবছে বলে নায়ক মনে করে। সাথে সাথে ক্যাট জানায় সেতর ক্যান্সারে আক্রান্ত এবং ওর সুইসাইড করার প্ল্যান আছে। এবং সে এই সুইসাইডটা তার খুব প্রিয় একটা সময় এবং জয়গাতেই করবে বলে ওদের ধারনা হয়। সেতর কিছুদিন আগে ভিয়েতনামে তার পরিবারের সাথে ছুটি কাটাতে যাওয়ার সময়টাকে বেছে নেয় আত্মহত্যার জন্য। সেতর মারা গেলে পুরো পৃথিবীই ধ্বংস হয়ে যাবে কারণ সে একটা ডেড ম্যান সুইচ বাবহার করছে। অর্থাত্ সেতর মারা গেলে ওর হাতে পরা ঘড়িটা ভবিষ্যতে একটা সিগনাল পাঠাবে যা আ্যলগরিদমের লোকেশন তাদের জানিয়ে দেবে।
এরপর নায়ক, নীল এবং ক্যাট আবার অতীতে যায়। ক্যাট ভিয়েতনামে সেতরকে বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টা করে যতক্ষণ না পর্যন্ত আলগরিদমটা টেনেটের এজেন্টরা উদ্ধার করছে। অন্যদিকে টেনেটের সদস্যরা একটা টেম্পোরাল প্রিন্সার মুভমেণ্ট ব্যবহার করে আলগরিদমটা উদ্ধার করার জন্য। সিনেমার শেষ কিছু অংশ বুঝতে হলে এই টেম্পোরাল প্রিন্সার মুভমেন্টের ব্যাপারটা একটু বুঝতে হবে। সাধারণ ভাবে টেম্পোরাল প্রিন্সার মুভমেন্ট আর্মিদের একটা টেকনিক যেখানে দুই দিক থেকে একসাথে আ্যটাক করা হয়। এটা একরকমের ব্যূহ বলা যেতে পারে। এতে শত্রুপক্ষ দু'দিক থেকে আস্তে আস্তে একটা দমবন্ধকর পরিস্থিতিতে এসে পড়ে। টেনেটে এই টেকনিকটাই ব্যবহার করে নায়ক, নীল এবং তার সঙ্গীসাথীরা। কিন্তু এখানে তাদের আক্রমণ সময়ের দুদিক থেকে। জিনিসটা যাতে বুঝতে সুবিধা হয় তাই টিম ব্লু আর টিম রেড এই দু-ভাগে দলটাকে ভাগ করা হয়েছে। টিম রেড সময়ে সোজা পথে যাচ্ছে। টিম ব্লু উল্টো পথে যাচ্ছে। ইনভার্টেড সৈন্যদের চেনার আরেকটা উপায় হলো এরা অক্সিজেন মাস্ক পরে থাকে। যেমন নীল অক্সিজেন মাস্ক পরে টিম ব্লু তে। অন্যদিকে ইভ্স এবং নায়ক টিম রেডে। টেম্পোরাল প্রিন্সার মুভমেন্ট ছবিতে আমরা আগেও দেখেছি 'উল্টো সেতর' এর সময়।
নায়ক এবং ইভ্স যখন আ্যলগরিদমের লোকেশনে পৌঁছয় আন্ডারগ্রাউন্ড একটা বাঙ্কারে, ততক্ষনে বেশ খানিকটা দেরি হয়ে গেছে। সেতরের বডিগার্ড আ্যলগরিদমটা কবর দিতে চলেছে। এখানে নায়কের সাথে বডিগার্ডের একটা ধস্তাধস্তি হয়। বডিগার্ড নায়কের উদ্দেশ্যে গুলি চালায় এবং এই সময়ই একটা মিরাকল্ হয়। একজন মৃত সৈন্য (যে গেটের ওপারে মরে পড়ে ছিল) হঠাৎ জীবন পথে পারি দিয়ে সেতরের বডিগার্ডের গুলি খায় এবং নায়কের জীবন বাঁচায়। শেষমেষ নায়করা আলগরিদমটা উদ্ধার করে ফ্যালে।
এদিকে ক্যাট সেতর আত্মহত্যার করার আগেই তাকে খুন করে দেয় এবং পালিয়ে আসে। নীল ব্লু টিমে থাকলেও নায়ক এবং ইভ্স আন্ডারগ্রাউন্ডে যাওয়ার পরই নীল একটা টার্নস্টাইলের ভেতর দিয়ে যাওয়ার সময় নিজেকে আন-ইনভার্ট করে এবং বিস্ফোরণ ঘটার আগেই নায়ক এবং ইভ্স কে একটা ট্রাকের সাহায্যে টেনে বের করে।
সিনেমাটা প্রথমবার দেখে অনেক কিছুই দুর্বোধ্য লাগে। সেটা নোলানের মোটামুটি যেকোনো ছবির ক্ষেত্রেই সত্য। কিন্তু এই ছবিটা বিশেষ ভাবে দুর্বোধ্য এবং তার কারণ আগেই কিছুটা আলোচনা করেছি। অনেকেই ছবিটা দেখে বলেছিলেন এটা ঠিক নোলানচিত মুভি নয়। আমিও তাই বলেছিলাম। আমাদের যে নায়ক, তার কোনও নাম নেই, তার কোনও ব্যাকস্টোরি নেই। নীলেরও কোনও ব্যাকস্টোরি নেই। ছবিতে সেভাবে কোনও ক্যারেক্টার ডেভেলপমেন্ট নেই। কিন্তু আদৌ কী তাই? এমন নয়ত যে আমরা ছবিটার মূল উদ্দেশ্যটাকেই ধরতে পারিনি? হয়ত ছবিটা বোঝা আমাদের লক্ষ্য না হয়ে, ছবিটা কতটা দুর্বোধ্য এবং কেন দুর্বোধ্য সেটাই আমাদের লক্ষ্য হওয়া উচিত ছিল। আগেই বলেছি ছবিটা ইচ্ছাকৃত ভাবেই অস্বচ্ছ। কিন্তু কেন? কেননা সিম্পলি, সমস্থ কিছু বুঝতে পারা সহজ নয়। সময়ের এই লুপ আসলে এরকমই আ্যবসার্ড। ছবিটার মধ্যে প্রচুর সংলাপ আছে যার আলাদা করে তেমন মানে নেই। সংলাপগুলো বাবহার করা হয়েছে কখনো টেনশন বিল্ড আপ করতে, আবার কখনো আ্যবসার্ডিটি বাড়াতে।এছাড়াও, শুধু যে প্লটের জটিলতায় আমরা ডুবে অছি এমন নয়। পুরো সিনেমা জুড়েই আমাদের কাছে টুকরো টুকরো সংলাপ আর ইনফরমেশন আসে যা আমরা সাজিয়ে চলি। কিন্তু কোনও নিশ্চিত মানে তৈরি করতে পারিনা। আমাদের ছবির নায়কও তাই, একের পর এক তথ্য তার কাছে আসে কিন্তু কোনটা সত্য কোনটা মিথ্যা সে জানেনা। সেও কিনারায় পৌঁছতে পারেনা। ছবির গল্পটা আসলে টাইম ট্রাভেল নিয়ে নয় —এই অবসার্ড কন্ডিশনটাকে নিয়ে।
সিনেমার একদম শেষে দেখা যায় আলগরিদমটা তিনটে টুকরো করে নায়ক, নীল এবং ইভ্স নিয়ে নেয়। এবং নায়ক লক্ষ্য করে সেই নিজের জীবন বলিদান দেওয়া সৈনিকের ব্যাগের মতই নীলের ব্যাগ। আমরা বুঝতে পারি আন্ডারগ্রাউন্ডে নীলই তার জীবন দিয়ে নায়ককে বাঁচিয়েছে। নীল নায়ককে জানায় আসলে নীল কে নায়কেরই ভবিষ্যত্ ভার্সন টেনেটের এই মিশনে নিযুক্ত করেছে। এবং তার অতীত আসলে রয়েছে ভবিষ্যতে। ভবিষ্যতে নীল এবং নায়ক ভাল বন্ধু।
ছবির একদম শেষ দৃশ্যে প্রিয়া ক্যাটকে মেরে ফেলার চেষ্টা করে কারণ ক্যাট অনেক কিছু জানে। কিন্তু নায়ক বুঝতে পারে এই টেনেটের মাসটারমাইন্ড আসলে সে নিজেই এবং তাই প্রিয়াকে সে খুন করে দেয়।
সিসিফাসের গল্পটা মনে আছে? দেবতার অভিশাপে সে একটা প্রকাণ্ড পাথর ঘাড়ে করে পাহাড়ের উপরে তোলে। কিন্তু যখনই সে উপরে পৌঁছে যায়, তার হাত থেকে পাথরটা পড়ে যায়। পাথরটা গড়াতে গড়াতে আবার নিচে চলে যায়। সিসিফাস আবার পাথরটাকে উপরে তোলে। আবার একই ঘটনা ঘটে। ঘটতেই থাকে। যুগের পর যুগ। সেরকমই সিনেমার শেষের দিকে একটা দৃশ্য মনে পড়ে যেখানে নীল বলে, এটাই তার গল্পের শেষ কারণ তাকে এখন তার নির্দিষ্ট যায়গায় যেতে হবে বডিগার্ডের করা সেই গুলিটা খেতে। (অর্থাত্ নীল "তাদেরই দলে বার বার মরে যায় যারা")। কিন্তু চিন্তার কিছু নেই কেননা নায়কের ভবিষ্যতে আবার তাদের দেখা হবে। নায়কই আবার তার অতীত সেল্ফকে সেই কীইভ অপেরা হাউসের অভিযানে পাঠাবে যাতে সে পরবর্তীকালে নিজেই নিজেকে টেনেটে নিযুক্ত করতে পারে। অর্থাত্ গল্পটা ঠিক কোথায় শুরু সেটা এখানেই গুলিয়ে যায়। ঠিক এই সময়ই আমরা বুঝতে পারি (সিনেমাটা দ্বিতীয় বা তৃতীয়বার দেখার সময়) যে সিনেমাটা নিজেই একটা টেম্পোরল প্রিন্সার মুভমেণ্ট। ওই যে শুরুতে বলেছিলাম না গ্র্যান্ডফাদার প্যারাডক্স-এর কথা! নীলের কথা ধার করে বলা যেতে পারে, লুকিং ফর আ্যন আনসার ইজ মিনিংলেস, বিকজ দিজ ইজ আ প্যারাডক্স। ছবির নামটা খেয়াল করেছেন? নামটাও একটা প্যালিনড্রোম—Tenet— অর্থাত্ 'সোজা দিক থেকেও যা উল্টো দিক থেকেও তা'।
আমার পছন্দের সিনেমাগুলোর একটা এই "টেনেট" খুব ভালো লাগলো পড়ে।
ReplyDeleteধন্যবাদ, অর্ঘ্য।
Delete